প্রবাস মানে দূর দেশ, প্রবাস মানে আত্মীয়-স্বজন বিহীন বছরের পর বছর একাকী কাটিয়ে দেয়া, প্রবাস মানে দেয়াল বিহীন কারাগার, প্রবাস মানে শত দুঃখকষ্টের সঙ্গে বিরামহীন যুদ্ধ করা এবং প্রবাস মানে প্রতিটি নিঃশ্বাসে মাতৃভূমির অগণিত স্মৃতি জড়িত।
-আ,হ,জুবেদঃ সম্পাদক অগ্রদৃষ্টি ও সাধারণ সম্পাদক ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম (আই,এম,এফ)
প্রবাসী জীবনের সুখ দুঃখের কথা লিখতে গেলেই মনটা কষ্টে ভরে উঠে, কলম যেন থেমে যেতে চায়।বুকের মধ্যখানে অজানা এক শুন্যতা আসন করে বসে, পুরনো স্মৃতির খাতার প্রতিটি পাতা নতুন করে চোখের সামনে ভেসে উঠে নিজের অজান্তে চোখ থেকে অনাকাংখিত কিছু জল ঝরে পড়ে।
নিজেকে বড় একা মনে হয়, পাওয়া আর না পাওয়ার হিসেব মিলাতে পারি না।অবহেলা আর অনাদরের এই প্রবাসী জ়ীবনের ইতিবৃত্ত জানি না কোথা থেকে শুরু করবো। চেষ্টা করবো আমাদের যন্ত্রনা গুলো সবার সাথে ভাগাভাগী করে নিতে, জানি সম্ভব নয় তবুও চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি। স্ব্প্নে্র প্রবাস বাস্তবে বিশাল আকারের এক দানব বললে ভূ্ল বলা হবে না। প্রবাস নামক দানবের কাহিনী লিখতে বসেছি তাই কিছু ভয় কিছু কষ্ট আমাকে পিছনে আকড়ে ধরেছে।
আজ আমি সব কিছু উপেক্ষা করে পাঠকের সামনে প্রবাস জীবনের যন্ত্রনা তুলে ধরার আপ্রান চেষ্টা করবো, যা অনেকের কাছে নতুন এবং অবিশ্বাস্য বলে মনে হতে পারে। আমি যা লিখবো তার এক একটি অক্ষর বাস্তব সত্য। যাহা বাস্তব, তাহা সহজে শ্রুতি মধুর হয় না, সুখের শেষ সীমায় নিয়ে যায় না। স্বপ্নের সাজানো প্রবাস আর বাস্তবের এই প্রবাসের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যাবধান।বিষেশ করে আমার এই লেখার সাথে স্বপ্নের প্রবাসের কোন যোগসূ্ত্র নেই।
আমরা যারা প্রবাসী তাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে অনাকাংখিত হাজারো কাহিনী যা আমাদের আপনজন দেশবাসী জানেন না, আজ আমি প্রবাসের বাস্তব রূপ দেখাবো। আজ আমি প্রবাসীর ক্রন্দন শুনাবো।
অনেকদিন থেকে এই ধরনের একটি লিখবো লিখবো করে লিখা হয়ে উঠেনি। কষ্টের কথা গুলো নিয়ে লিখতে গেলে কষ্ট বাড়ে বৈ কমে না, আমাদের যন্ত্রনা হাহাকার শুনিয়ে আমাদের ভালোবাসা প্রাণ মানুষের চোখে জল ঝরিয়ে কি লাভ? যাদেরকে আমরা প্রবাসীরা এতো ভালোবাসি ওদেরকে বেদনার সাগরে ভাসানো কি ঠিক হবে?
হয়তো অতিরিক্ত কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্তি দেয়ার জন্য এই নিরবতা পালন করছি। কিন্তু এখন সময় এসে গেছে তাই বুকে পাথর রেখে হলেও আমাকে লিখতে হবে। আমাদের অজানা কষ্ট পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জানা উচিৎ।আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার যন্ত্রনা আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখবো কাউকে কোনদিন কিচ্ছু বলবো না, আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত কথা রাখতে পারলাম না।আমি আমার বিবেকের কাছে হার মেনেছি, আমার বিবেক আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় বিবেকের এই দংশন থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় অবলম্বন করতে হলো।
আজ আমি অনাখাংখীত বিষয় নিয়ে লিখবো, আমি যা জেনেছি আমি তা সবাইকে জানাবো,
আমি যা দেখেছি তাই লিখবো, আমি যা শুনেছি তা লিখবো না। আমার এই লিখার সত্যতা যাচাই করবে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী ভাই বোন।
এই লিখা কোন রোমান্টিক উপন্যাস নয়, কারো একজনের জীবন কাহিনী নয়।এই লেখাগুলো আমার মতো লক্ষ লক্ষ প্রবাসী ভাই বোনের প্রতিদিনের কাহিনী, চোখের জল দিয়ে লেখা এই কাহিনী।
আমি জানি এবং বিশ্বাস করি আমার এই লেখা ভালোবাসা প্রান আপন মানুষকে অন্তরে অন্তরে কাদাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
পৃথিবীর ওজন থেকে আরো বেশী ওজনের কষ্ট বুকে নিয়ে আমরা যে বেঁচে আছি তা আজ আমাকে লিখতে হবে। সবাইকে পরিচয় করে দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।
ভাগ্য পরিবর্তে্র দৌড় ঝাঁপ দিতে গিয়া প্রবাসীরা কতবার মৃত্যুবরণ করে আর কতবার বেঁচে উঠে তার হিসাব কে রাখে?
ভালোবাসার কাংগাল, একটু আদরের কাংগাল চোখের জল চোখেই শুকায়, যাদের বুকের আশা বুকেই শুকিয়ে কাঠ হয় যা স্বচোক্ষে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে কারন আমি ছিলাম তাদের একজন।
এসব রূপকথার গল্প নয়, সাজানো কোন কাহিনী নয় যা আমি আমার ইচ্ছেমত কাগজের বুকে আঁচড় কেটে কল্পনার রঙ দিয়ে সাজিয়েছি।
এক সময় প্রবাস সম্পর্কে আমারও অন্য রকম ধারনা ছিল যা আজ আর নেই। বাস্তবতার সাথে পরিচিত হবার পর আমার ক্কপল্পনায় সাজানো প্রবাসের প্রানকাড়া ছবিটি তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে গেল। দেখতে দেখতে সারাজীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্ব্প্ন মরুভূমির আকার ধারন করতে এতটুকু সময় লাগে নি। কল্পনায় যে কোন কিছুতে রঙ দেয়া যত সহজ বাস্তবে তা কিন্তু অনেক সময় হয়ে উঠে না।
আমরা যাহা ধরতে পারি না, যাহা নাগালের বাহিরে থাকে না এই ধরনের বিষয়বস্তুকে খুবই প্রাধান্য দিয়ে থাকি এবং ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। মনে মনে সফলতার একটা চিত্র দাঁড় করে নিজে নিজেই তৃপ্ত হই, যেমন প্রবাস জীবন।
শীঘ্রই আসছি পরবর্তী পর্বে, ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন।